ঢাকা , সোমবার, ০৫ মে ২০২৫ , ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে বাঘ-সিংহের খাদ্য বাসি গরুর মাংস সরবরাহ লালমনিরহাটে সেপটিক ট্যাংকে শ্রমিকের মৃত্যু বিরলে সর্প দংশনে ২ জনের মৃত্যু নওগাঁয় গৃহকর্মী থেকে সফল হাঁসচাষি খাতিজা সাঘাটায় বাঙালি নদীতে বালু উত্তোলন হুমকিতে ব্রিজ ও ফসলি জমি শেরপুরে অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে বাধা বাবুগঞ্জে বাঁধ নির্মাণ সংরক্ষণের জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজের উদ্বোধন জমা পড়েছে দায়সারা প্রতিবেদন তিন লাশের পরিচয় মেলেনি ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই হাসপাতালে ৪৩ রোগী আসন্ন বর্ষায় এবারও ঢাকা ডুবে যাওয়ার শঙ্কা এবার পাল্লা ভারী করার মিশনে বিএনপি রফতানিতে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা ৫ মে থেকে আন্দোলনে নামবেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা ‘কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না’ ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে নির্বাচন হওয়া উচিত-শফিকুর রহমান তারেক রহমানের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি আজ ঢাকায় ব্যবসা খুঁজতে আসছে চীন জুলাইয়ের বিপক্ষ শক্তি হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে- প্রেস সচিব আ'লীগের পুনর্বাসন মানবো না অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া বার্তা দিলো হেফাজত
মিরসরাইয়ের ১২ বিদ্যালয়

কাজ শেষ হয়নি ৮ বছরেও খোলা মাঠে পড়ছে শিশুরা

  • আপলোড সময় : ০৪-০৫-২০২৫ ০৬:৫১:৪৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০৫-২০২৫ ০৬:৫১:৪৭ অপরাহ্ন
কাজ শেষ হয়নি ৮ বছরেও খোলা মাঠে পড়ছে শিশুরা
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৮ বছরেও শেষ হয়নি ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ। অথচ এই কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল ১৭ মাসে। বারবার সময় বাড়িয়ে বিল নিলেও কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ঠিকাদারদের মাঝে নেই দ্রুত কাজ শেষ করার তাড়া। এতে শ্রেণিকক্ষ সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। অনেক স্কুলে ঝড়বৃষ্টি ও রোদের মাঝে খোলা মাঠে চলছে শ্রেণিকার্যক্রম।
জানা যায়, এসব বিদ্যালয়ের নির্মাণের কাজ পায় ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করিম গ্রুপের ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন ও সরকার স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপটে বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিতো ফরিদপুরের করিম গ্রুপের এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের ইচ্ছেমতো কাজ না করেও বিল উত্তোলন করতো। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মিরসরাইয়ে সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ না করে পালিয়ে গেছে এ প্রতিষ্ঠান। সরকার স্টিল লিমিটেড একইভাবে তাদের পাঁচটি স্কুলের কাজ করেই চলে যায়। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবেদন দিলেও উপর মহলে গেলে সব ম্যানেজ করতো ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন।
জানা যায়, ৮ বছর ধরে এসব বিদ্যালয়ে ভবনের অভাবে ক্লাস নিতে হচ্ছে খোলা জায়গায়। কোথাও টিনসেড বেড়ার ঘরে। শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট কক্ষে অস্থায়ী টিনের ঘরে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গাদাগাদি করে বসে অসুস্থ হয়ে যায়। পাঠদানের পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জন্য সরকার বরাদ্দ দেয় ৫১ কোটি ৩২ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৪ টাকা। প্রতিটি বিদ্যালয়ের ভবনে নির্মাণের জন্য ৪ কোটি ২৭ লাখ ৬৯ হাজার ২৮২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ভবন নির্মাণ কাজের জন্য সময় দেয়া হয় ১৭ মাস। ৮ বছর শেষ হয়ে গেলেও বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজের এখনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। এই সময়ে মাত্র ৩০ শতাংশের মতো কাজ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন ও সরকার স্টিল আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রাখতো বলে গাফলতি করে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ শেষ করেনি।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মিরসরাই উপজেলায় সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, বদিউল্লাহ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শফিউল আলম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যম মিঠানালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফয়েজউল্ল্যাহ মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইতকান্দি চৌধুরী পারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডোমখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোলকিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়া পাঁচটি স্টিল স্ট্রাকচারের তিন তলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরকার স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং। সরকার স্টিলের বিদ্যালয়গুলো হলো-কমরআলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যম ডোমখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সফিউল্ল্যাহপারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজী কামাল পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিশ্বদরবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিশ্ব দরবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলা উদ্দিন আনোয়ার বলেন, আমাদের স্কুলটি স্টিল স্ট্রাকচারের ওপর তিনতলা ভবন হওয়ার কথা। কাজ করছে সরকার স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং। ঠিকাদার সামান্য কাজ করে পালিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ না থাকায় পাশে বাঁশের বেড়া ওপরে টিনের ঘরে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস নিতে হচ্ছে। গরমে শিশুরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সামনে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি পড়বে। উপজেলার যেসব অফিসার আসে তাদের বারবার বলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। ৮ বছর ধরে এই অবস্থায় স্কুলটি ধ্বংস হওয়ার অবস্থা। অথচ ১৭ মাসে আমাদের ভবন নির্মাণ শেষ করে বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল।
মায়ানী ইউনিয়নের শফিউল আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র দাস বলেন, আমরা ক্লাসরুমের সংকটে ক্লাস নিতে পারছি না। ৮ বছরেও ভবন পাইনি। আর কবে পাবো জানি না। ৮ বছর ধরে ঝড়বৃষ্টি রোদে নির্মাণসামগ্রী নষ্ট হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস নিতে হবে। আমরা অনেক বার অভিযোগ দিয়েছি। ঠিকাদার মাঝে মধ্যে এসে কিছু কাজ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এভাবে নির্মাণসামগ্রী জং ধরে প্লাস্টার উঠে নষ্ট হয়ে যায়। এত নিম্নমানের কাজ হয়েছে যে বলার অপেক্ষা রাখে না।
ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আইয়ুব আলী জানান, তিনি এক বছর আগে মিরসরাইয়ে বদলি হয়ে আসেন। সে জন্য কত সালে কাজ শুরু হয়েছে সঠিক বলতে পারছেন না। তাদের কোম্পানির সাতটি স্কুলের জন্য ৩ কোটি ৮০ হাজার বা প্রায় ৪ কোটি বাজেট ছিল। কাজ পাওয়ার পর শুরুতে দুই বছর কোভিডের কারণে কাজ বন্ধ ছিল। তারপর কেন বন্ধ ছিল তিনি বলতে পারেন না। তবে এখন কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হতে ৬ মাস বা আরো কিছু বেশি সময় লাগতে পারে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিগত ৮ বছর ধরে ঝড়বৃষ্টি, বর্ষা ও গরমে কষ্ট করছেন। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এসব প্রকল্প দেখভাল করে। আমি ২০২২ সালে বদলি হয়ে মিরসরাইয়ে আসার পর বারবার যোগাযোগ করেছি। দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কিছুদিন যৎসামান্য কাজ করে আবার চলে যায়। দীর্ঘদিন আর খবর থাকে না। এভাবে কবে শেষ হবে স্কুল নির্মাণের কাজ বলতে পারছি না।
সরকার স্টিল লিমিটেডের পরিচালক জামিল হোসেন সরকার জানান, আমরা পাঁচটি স্কুল নির্মাণের কাজ পেয়েছিলাম। দুটি বাতিল হয়েছে। বাকি তিনটি স্কুলের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করবো। স্টিলের কাজে ভালো অগ্রগতি হয়েছে, তবে সিভিল কনস্ট্রাকশনের কাজ বাকি আছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আশা করি শেষ করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে কাজ শুরুর পর মহামারি করোনার কারণে স্টিলের দাম বেড়েছে। আমরা বারবার বরাদ্দ বাড়ানোর আবেদন করেছি। না বাড়ানোর কারণে এখন আমাদের সর্বস্ব বিক্রি করে হলেও কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে।
মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী রনী সাহা বলেন, ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন ও সরকার স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং দুটি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। তারা কিছুদিন কাজ করে তারপর ফেলে চলে যায়। এভাবে ৮ বছর কাজ ফেলে রাখলে গুণগত মান ঠিক থাকবে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ আমরা তদন্ত করে রিপোর্ট করবো।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স